কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা জানুন

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা জেনে রাখা, আমাদের প্রত্যেকটি মুসলমান বান্দার জন্য ফরজ কাজ। কোরবানি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইব্রাহিম (আঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব ও ত্যাগের গল্প। আমরা কোরবানি দিব মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে নয় কোরবানি দেব আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য। 

কোরবানির-ফজিলত-সম্পর্কে-হাদিসের-আলোকে-বর্ণনা-জানুনহাদিসে বর্ণিত রয়েছে তোমরা কোরবানি দাও ধনী ও গরিবের মাঝে ভেদাভেদ দূর করতে এবং সুষম সম্পর্ক তৈরি করতে। তাহলে এখন আমরা জানবো কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা।

পেজ সূচিপত্র: কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে ১০ টি হাদিসী বর্ণনা

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে এখন বর্ণনা করা হবে। মুসলিম ধর্মের প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির জন্য কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের জন্য প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে হাদিসের নিয়ম অনুসারে কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের একটি বড় মাধ্যম হলো কোরবানি। কোরবানী শুধু মাংস খাওয়ার জন্য নয়, কোরবানি দেওয়া হয় ধনী গরিবের ভেদাভেদ দূর করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায়।

আরো পড়ুনঃ গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জানুন   

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, আপনি যদি কোরবানি দেন তাহলে কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে আপনি একটি করে নেকি পাবেন। এছাড়া এটাও বর্ণিত রয়েছে আপনার সামর্থ্য থাকার পরেও আপনি যদি কোরবানি না দেন তাহলে ঈদগাহে না আসার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদিস নিচে বর্ণনা করা হলো:

কোরবানির পশুর পশমের বিনিময় নাকি অর্জন: যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনি অবশ্যই কোরবানি দিন, কারণ কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে আপনি একটি করে নেকি পাবেন।

কোরবানি দেওয়া ব্যক্তি কেয়ামতে যা পাবে: কোরবানির পশুর লোম ও পশমসহ তার শরীরের প্রতিটি অংশ কিয়ামতের দিন কোরবানি দেওয়া ব্যক্তি জন্য নেকি হিসেবে গণ্য হবে। 

ত্যাগ ও নৈকট্য লাভ: কুরবানী আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়।

ইবাদতের গুরুত্ব: কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানির না করলে হাদিসে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। 

নবী-রাসূলদের সুন্নাত: কোরবানি শুধু একটি উম্মতের জন্য নয়, কোরবানি সকল নবী রাসূলদের শরিয়াতেই প্রচলন ছিল।ইতি নবী ইব্রাহিম (আ:) এর ও সুন্নাত বলা হয়।

ইসলাম অনুসারে কোরবানী করার গুরুত্ব

মুসলিম ধর্মের ব্যাক্তিদের জন্য কোরবানি একটি বড় ইবাদত। ইসলামের বিধান অনুসারে কোরবানীর গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলমানদের জন্য কোরবানি একটি বড় ইবাদত, যা ঈদুল আজহার জিলহজ মাসের ১০,১১ ও ১২ তারিখে সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুসারে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার প্রথম পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হন তখন ইসলামের ইতিহাসে সেটাই ছিল কোরবানির সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এই ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য কোন কিছুই বড় না। তাই মুসলমানদের জন্য কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। কোরবানি কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো যা পড়লে আপনারা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন কোরবানি দেওয়ার গুরুত্ব কতটা। 

  • হাদিসে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ তুমি বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের। (সূরা আল-আন'আম, আয়াতঃ ১৬২)
  • হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ কোরবানি দিবসে আদম সন্তান যে আমল করে তার মধ্যে আল্লাহর কাছে কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় কিছু নেই। (তিরমিজি, হাদিসঃ ১৪৯৩)
  • ইবন মাজাহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছেঃ কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। তাই মন থেকে খুশি হয়ে কুরবানী করুন। (ইবন মাজাহ, হাদিসঃ ৩১২৬)
  • আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো। (সূরা কাওসার, আয়াতঃ ২)
  • আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, 
  • কোরবানির পশুর মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়। (সূরা হজ, আয়াতঃ ৩৭)
  • হাদিসে বর্ণিত রয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেনঃ কোরবানি দিবসে আদম সন্তানের কোনো আমলই আল্লার কাছে কোরবানির চেয়ে প্রিয় নয়। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, লোম, ও খুরসহ উপস্থিত হবে। এবং কোরবানি পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। (তিরমিজি, হাদীসঃ ১৪৯৩)
  • আরো বর্ণিত হয়েছে, 
  • যার সামর্থ্য আছে কোরবানি করার অথচ সে কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদীসঃ ৩১২৩)
  • অর্থাৎ, কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা যায়, কোরবানির মূল লক্ষ্য পশুর মাংস বা রক্ত নয়, বরং আমরা আমাদের মনের নিষ্ঠা, আনুগত্য ও তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। আর অবশ্যই একজন সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির জন্য কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

কোরবানী সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস

কোরবানি ইসলাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জন। কুরবানীর মাধ্যমে একজন মুসলমান ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তার নিজের অন্তরের ত্যাগ, ভালবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ করে। কুরবানী শুধু পশুর জবাই করা নয়, বরং এটি একটি গভীর আত্মত্যাগের বিষয়, আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা হয়। আমরা যদি কোরবানির কোরআনের আয়াত ও হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করি তাহলে আপনার আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিস।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সমূহঃ

  1. সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত:(২২:৩৬-৩৭): সকল মুসলমান মুমিন ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি পশুকে আল্লাহ নিদর্শন বানিয়েছি, এতে এর জন্য কল্যাণ রয়েছে। তোমরা যখন কোরবানি পশু গুলোকে একত্রে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে জবাই করবে, তখন মহান আল্লাহ তায়ালার নাম স্মরণ করো। যখন কুরবানী পশু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, তখন সেটির মাংস বন্টন করে নিজে খাও এবং অভাবীয় দরিদ্রকে খাওয়াও। আরো বলেছে, কোরবানি পশুর মাংস রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং তাদের অন্তর থেকে করার নিয়ত, আনুগত্য প্রকাশ ও তাকওয়া পৌঁছে। 
  2. সূরা আল-কাওসার, আয়াত:(১০৮:২): অতএব পর, তোমরা তোমাদের রবের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।
  3. সূরা আস-সাফফাত, আয়াত:(৩৭:১০২-১০৭): যখন ইব্রাহিম (আ:) বললেন, হে আমার পুত্র আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি তোমাকে কুরবানী করছি, এতে তোমার মতামত কি? তখন ইব্রাহিম (আ:) পুত্র বললেন, হে আমার পিতা আপনি যা আদেশ পেয়েছেন তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। যখন পিতা ও পুত্র উভয়ে আত্মসমর্পণ করল, এবং ইব্রাহিম (আ:) তার পুুএ কে কপালে শুয়ে দিলেন, তখন আমি ডেকে বললাম, হে ইব্রাহিম তুমি তোমার স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন করেছ। এরপর আমরা তার পরিবর্তে একটি বড় কোরবানি প্রদান করলাম।
  4. সূরা আল আন'আম, আয়াত:(৬:১৬২): বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু সব কিছুই আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক।

কোরবানি সম্পর্কে হাদিসের আয়াত সমূহঃ

  1. তিরমিজি শরীফ, হাদীস:(১৪৯৩): হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, কোরবানি দিবসে আদম সন্তানের কোন আমলই আল্লাহর কাছে কোরবানী চেয়ে প্রিয় নয়। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিনে তার শিং, লোম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। কোরবানি পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। তাই মানুষ দেখানোর জন্য নয়, মন থেকে খুশি হয়ে আল্লাহর নামে কোরবানি করো। 
  2. ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস:(৩১২৩): অতএব পর আর ও বলেছেন, যে মুসলিম ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
  3. সহি বুখারি ও মুসলিম, হাদীস:(১৯৬৬): হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজ হাতে দুটি সাদা কালো দাগ যুক্ত বড় শিং ওয়ালা দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি জবাই করার সময় বলেছিলেন, বিসমিল্লাহ, আল্লাহ আকবার।
  4. সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাহী: যে ব্যক্তি কোরবানি করবে, সে যেন কুরবানী পশুর কোন অংশ বিক্রি না করে। কুরবানীর কোন অংশ বেচাকেনা করা যাবে না, কারণ এটি পূর্ণ ইবাদত। 
  5. ইমন মাজাহ, হাদীস:(৩১২৭): কোরবানি পশুর প্রত্যেকটি পশম ও চুলের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব পাবে।

সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করার গুরুত্ব

সমাজের দৃষ্টিতে কোরবানি করার গুরুত্ব অনেক ও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ কোরবানি শুধু মাংস খাওয়া নয়, কোরবানি করার মাধ্যমে ধনী গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ দূর হয়, সমাজের মধ্যে একতা ও সহমর্মিতার বাঁধন তৈরি করে। কোরবানি এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদত পালন করার জন্য ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে সবাই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করে। যখন কোন মুসলমান ঈমানদার ব্যক্তি কোরবানি দেয় এবং সেই মাংস দারিদ্রদের ও অভাবগ্রস্থ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয়, তখন তার মধ্যে সহমর্মিতা এবং মানবিকতার বোধ বৃদ্ধি পায়। 

কোরবানি-সম্পর্কে-কোরআনের-আয়াত-ও-হাদিসকোরবানি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সমাজে শুধু নিজের সুখেই নয়, অন্যের কল্যাণেও দায়িত্ব রয়েছে। কোরবানি মানুষকে দান, সহায়তা ও ন্যায়বিচারের পথে পরিচালিত করে। কোরবানি আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক আর মজবুত করে। কোরবানি মানুষকে আত্মত্যাগ পরিষ্কার ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়। যখন সমাজের মানুষ এই চেতনা ধারণ করে তখন সেখানে অন্যায়, হিংসা, লোভ ও স্বার্থপরতা কমে যায়।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানী হলো একটি মানবিক, নৈতিক ও ঐক্যের বন্ধন। কোরবানি কে শেখায়, সত্যিকার আনন্দ তখনই পূর্ণ হয় যখন আমরা নিজের সুখ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। এবং নিজের ভেতরের থাকা অহংকার, হিংসা দূর করে একে অপরের ওপর সহমর্মিতা ও সহনশীলতা তৈরি করতে পারি।

কোরবানির গোশত বন্টনের হাদিস

কোরবানির গোশত বন্টনের সময় আমাদের অনেকেরই মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। আবার আমরা অনেক সময় কোরবানির গোশত বন্টনে ভুল করে থাকি। কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানী করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। তাই কোরবানির গোশত বন্টনের আগে অবশ্যই এর সঠিক বিধান ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা অনেকেই জানি কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করতে হয়। তবে আজকে আমরা হাদিসে কোরবানি গোস্ত বন্টন সম্পর্কে কি নির্দেশ দেয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

কোরবানির গোশত বন্টন সম্পর্কে সহি হাদিস গুলো তুলে ধরা হলোঃ

হযরত সালমান ইবন আমর রা. থেকে বর্ণিত: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তুমি কোরবানির পশু কোরবানি করো, তারপর তার গোস্ত থেকে খাও, কিছু সংরক্ষণ করো এবং কিছু দান করো। (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৭১)

অর্থাৎ এটা থেকে বুঝা যায় কোরবানির গোশত কে তিন ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন, একভাগ নিজে খাবার জন্য, এক ভাগ সংরক্ষণ করার জন্য এবং একভাগ গরিব ও অভাবগ্রস্থদের দান করার জন্য।

হযরত বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা খাও, সংরক্ষণ করো এবং দান করো। (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ১৯৭৪)

কোরবানি কেবল একটু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় এটি একটি সামাজিক সংস্কার ও মানবিকতা প্রকাশের মাধ্যম। কোরবানির গোশত বন্টন এর মাধ্যমে সমাজের সমতা, দানশীলতা ও ভালোবাসা চেতনা বৃদ্ধি পায়। অতঃপর হাদীসের মাধ্যমে এটাই প্রকাশ পায়, কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং সমাজে মানবিকতার বিজ রোপন করা। এবং আমরা পানির গোস্ত যথাযথভাবে বন্টন করব। কারণ এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কাজ নয় এটি একটি মহান সামাজিক দায়িত্ব পালন বহন করে।

ত্যাগ ও কুরবানী সংক্রান্ত হাদিস

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, যার মূল ভিত্তি হল আল্লাহর প্রতি আনুগত্য তাকওয়া ও আত্মত্যাগ। কুরবানী এই তিনটি গুলির বাস্তব প্রকাশ। কোরবানি শুধু পশু জবাই নয় বরং এটি মানুষের অন্তরের ত্যাগ ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের এক নিদর্শন। ত্যাগ ও কোরবানির গুরুত্ব বোঝাতে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কোরবানির রক্তকে প্রবাহিত করাকে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় আমল হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, কুরবানীর পশুর গোস্ত বা রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর,  বরং আল্লাহর কাছে পৌঁছাই মানুষের তাকওয়া অন্তরের আত্মত্যাগ। কোরবানী শুধু পশু জবাই করায় নয় কুরবানী করা হয় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং নিজের অন্তরের আত্মত্যাগ প্রকাশ করতে।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান 

কোরবানি তাৎপর্য সংক্রান্ত হাদিস

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজের কোরবানি: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) দুটি সাদা কালো বেড়া দিয়ে কোরবানি করেছেন এবং জবাইয়ের সময় 'বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার' বলেছেন।

কোরবানি আল্লাহর কাছে পৌছাই: সূরা হজ্জের আয়াত অনুযায়ী, কোরবানির পশুর গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং মানুষের তাকওয়া ও অন্তরের ত্যাগ পৌঁছাই।

ত্যাগ ও আল্লাহর পথে দান সম্পর্কিত হাদিস

হিজরতের দৃষ্টান্ত: খাব্বার (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবীরা একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন। তাদের অনেকেই এই ত্যাগের ফল দুনিয়াতে না পেয়ে আখিরাতে চলে গেছেন, যেমন মুশহাব ইবনে উমায়ের (রা.) ওহুদ যুদ্ধের শহীদ হন।

ত্যাগের মর্যাদা: ত্যাগের সর্বোচ্চ উদাহরণ হলো নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কোরবানির ত্যাগের ঘটনা। যখন আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.) কি তার প্রিয় পুত্রকে কুরবানী করা নির্দেশ দিলেন, তখন তিনি বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলেন। আর তার পুএ ইসমাইল (আ.) বললেন, হে আমার পিতা আপনি যা আদেশ পেয়েছেন তাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০২)

কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির রক্তপাত: নহরের দিনে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর কাছে হচ্ছে কোরবানির রক্ত প্রবাহিত করা। এই হাদিসটি দ্বারা কোরবানির গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। 

ত্যাগ ও কুরবানির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য: কুরবানী শুধু পশু জবাই নয় বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং আনুগত্য প্রকাশ করা।

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: কোরবানি অর্থ কি? 

উত্তর: কোরবানি অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্ট ও নৈকট্য  অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহতালার নামে যে পশু জবাই করা হয় তাকে কোরবানি বলে। 

প্রশ্ন: কোরবানি দেওয়া সঠিক সময় কখন?

উত্তর: কোরবানি দেওয়া সঠিক সময় হল ঈদুল আযহার নামাজের পর ১০,১১ও১২ জিলহজ্ব মাসে এই তিন দিন কোরবানি দেওয়া উত্তম। 

প্রশ্ন: কোরবানি কেন করবেন?

উত্তর: আল্লাহতালার নির্দেশ পালন করতে এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর ত্যাগের কথা স্মরণ রাখতে কোরবানি করতে হবে। 

প্রশ্ন: কোরবানি দেওয়া কি সওয়াব?

উত্তর: হ্যাঁ অবশ্যই, হাদিসে বর্ণিত আছে কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যায়। 

প্রশ্ন: কোরবানি না করলে কি গুনাহ হয়?

উত্তর: সামর্থ্য থাকার পরেও যে ব্যাক্তি কুরবানী করে না, তার জন্য কুরবানী না করা গুনাহের কাজ। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, সামর্থ্য থাকার পরে যে ব্যক্তি কোরবানি করবে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। 

প্রশ্ন: কোরবানির মাংস ভাগ করার নিয়ম?

উত্তর : কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত। এক ভাগ নিচে ও পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর জন্য ও একভাগ অসহায় ও গরিবদের জন্য।

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা সম্পর্কে আলোচনা

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মুসলিম ধর্মের প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির জন্য কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট লাভের জন্য প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে হাদিসের নিয়ম অনুসারে কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের একটি বড় মাধ্যম হলো কোরবানি। কোরবানী শুধু মাংস খাওয়ার জন্য নয়, কোরবানি দেওয়া হয় ধনী গরিবের ভেদাভেদ দূর করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায়। 

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, আপনি যদি কোরবানি দেন তাহলে কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে আপনি একটি করে নেকি পাবেন। এছাড়া এটাও বর্ণিত রয়েছে আপনার সামর্থ্য থাকার পরেও আপনি যদি কোরবানি না দেন তাহলে ঈদগাহে না আসার নির্দেশনা দিয়েছেন।সেক্ষেত্রে প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা ফরজ। আপনারা যদি কুরবানী সম্পর্কে ইসলামিক বিধানগুলো জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বে। 

তাহলে আপনি কোরবানির সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আপনারা যদি এরকম আরো তথ্য নির্ভর আর্টিকেল পেতে চান অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং নিয়মিত ভিজিট করুন। আমাদের সঙ্গে থাকুন সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মেনি অল ইনফর্মেশন বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url