গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চাচ্ছেন? আপনি যদি গরমে ডাবের পানির উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমরা অনেকেই ডাবের পানি পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানিনা, কিভাবে ডাবের পানি খেতে হয়, কিভাবে ডাবের পানি পান করা শুরু করবো?
ডাবের পানি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাবো ডাবের পানির পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে এবং কিভাবে ডাবের পানি পান করতে হয়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ গরমের ডাবের পানির ১১টি বিশেষ স্বাস্থ্যসম্মত উপকারিতা
- গরমের ডাবের পানি উপকারিতা
- কাদের জন্য ডাবের পানি বিশেষ উপকারী
- ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভবতী মায়েদের ডাবের পানি উপকারিতা
- ডাবের পানি খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা
- ডাবের পানি খেলে কি গ্যাস হয়?
- রাতে ডাবের পানি খেলে কি ধরনের সমস্যা হয়?
- ডাবের পানি মুখে ব্যবহারের উপকারিতা
- ডাবের পানির পুষ্টি উপাদান সমূহ
- ডাবের পানির অপকারিতা
- লেখকের শেষ কথাঃ গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে
গরমে ডাবের পানি উপকারিতা
গরমে ডাবের পানির উপকারিতা অপরিসীম। গরমে ডাবের পানি কেন জরুরী? কারণ গরমে আমাদের শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় তাই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গরমের ডাবের পানি উপকারিতা অনেক। ডাবের পানি শুধু পানি নয়, এটি আমাদের শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ রাখার উপাদান। অতিরিক্ত গরমের কারণে আমাদের অনেকেরই ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে গরমে ডিহাইড্রেশন কমাতে এবং পানি শূন্যতা করতে রোধ করতে নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন। গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে ডাবের পানির উপকারিতা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে:
ডিহাইড্রেশন রোধ করে:
অতিরিক্ত গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে। আর সেই ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যাই প্রচুর পরিমাণে পানি এবং লবণ। শিখতে ডাবের পানি আমাদের পানি শূন্যতা রোধ করে এবং শরীরকে হাইডেড রাখে। তাই গরমে বেশি বেশি ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
ইলেক্ট্রোলাইট স্বাভাবিক রাখে:
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান। ডাবের পানিতে থাকা পটাশিয়াম এবং খনিজ উপাদান আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটস স্বাভাবিক রাখে।
আরো পড়ুনঃ কলার খোসার জানা অজানা নানা উপকারিতা
হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে:
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডাবের পানি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
ত্বকের জন্য উপকারী:
ডাবের পানি শুধু স্বাস্থ্যই নয় ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ডাবের পানি মুখে ব্যবহার করলে ত্বক ময়েশ্চারাইজার করে এবং ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন 'সি' যা ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
ডাবের পানিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ডাবের পানিতে থাকা ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
কাদের জন্য ডাবের পানি বিশেষ উপকারী
আপনি কি জানতে চাচ্ছেন ডাবের পানি কাদের জন্য বিশেষ উপকারী? তাহলে জেনে রাখুন ডাবের পানি সকল বয়সী মানুষের জন্য উপকারী। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু মানুষের জন্য ডাবের পানি বিশেষ উপকারী। যে সকল ব্যক্তি নিয়মিত শরীর চর্চা করে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, ডিহহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতায় ভুগছে, যারা নিয়মিত ত্বকের যত্ন করে, শারীরিক পরিশ্রমিক ব্যক্তি তাদের জন্য ডাবের পানি বিশেষ উপকারী। সামগ্রিকভাবে শরীরের স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডাবের পানির উপকারিতা অপরিসীম। আসুন তাহলে জেনে নিই ডাবের পানি বিশেষ করে কাদের জন্য বেশি উপকারী:
শারীরিক পরিশ্রমী ব্যক্তি:
যারা অতিরিক্ত পরিশ্রমী ব্যক্তি তারা অতিরিক্ত পরিমাণে ঘামে। আর গরম কালে এই ঘামের পরিমাণ হয় আরো বেশি। গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে শরীর অতিরিক্ত ঘামে আর সেই ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে যায়। আর এই পানির ঘাটতি পূরণ করতে পরিশ্রমী ব্যক্তিদের নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে হবে।
শরীরচর্চাকারী ব্যক্তি:
আমরা অনেকে শরীর ফিট রাখতে ব্যায়াম করি। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে, তারা খেয়াল করেছেন কিনা ব্যায়াম করার সময় আপনাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে আর সেই ঘামের সঙ্গে খনিজ লবণ এবং ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। আর এই ঘাটটি পূরণ করতে এবং শক্তি জোগাতে সাহায্য করে ডাবের পানি। তাই শরীরচর্চা করার পর অবশ্যই ডাবের পানি পান করতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ কারি ব্যাক্তি:
আপনি কি আপনার ডায়েট চার্টে খাবার হিসেবে ডাবের পানি ব্যবহার করেন? ওজন স্বাভাবিক করতে ডায়েট চার্টে অবশ্যই ডাবের পানি রাখতে হবে। কারণ ডাবের পানিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ক্যালরি গ্রহণ ওজন নিয়ন্ত্রণে একটি বড় উৎস।
পানি শূন্যতায় ভোগা ব্যক্তি:
অতিরিক্ত গরম এবং শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এর ফলে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। আর এই ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা রোধ করতে ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী। ডাবের পানি শরীরের সকল পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
ত্বকের যত্নে আগ্রহী ব্যক্তি:
শুনে হয়তো আশ্চর্য হবেন ত্বকের যত্নের ডাবের পানি। হ্যাঁ ত্বকের যত্নের ডাবের পানির উপকারিতা ও কার্যকারিতা অনেক। ডাবের পানিতে থাকা ভিটামিন 'এ' ও 'সি' ত্বক ময়েশ্চারাইজার করে এবং বিভিন্ন দাগ দূর করে। ত্বকে ভিতর থেকে রোগ মুক্ত করে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
হজম সংক্রান্ত সমস্যা ব্যক্তি:
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং হজম ক্রিয়াকে সহজ করে। ডাবের পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাদের হজম সংক্রান্ত সমস্যা আছে তারা নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে পারেন।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
প্রত্যেকটা খাবার খাওয়ার নিয়ম ও নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আমরা যদি নিয়ম করে খাই তাহলে সেই খাবারের পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়। হয়তো আপনারা অনেকে বিশ্বাস করবেন না ডাবের পানি খাওয়াও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যদি সেই নিয়ম মেনে আমরা ডাবের পানি খায় তাহলে তার উপকারীতা পাবো। তবে ডাবের পানি খাওয়া সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো খালি পেটে সকালে খাওয়া।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে
সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে হজমের সহায়তা করে ওর শরীরকে সতেজ রাখে। আবার পানি শূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে আপনি দুপুরের খাবারের পর ডাবের পানি পান করতে পারেন। ডাবের পানি কখনো ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন না কারণ ডাবের পানি বাতাসের সংস্পর্শে আসলে এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে চলুন জেনে নেয় কখন খাবেন ডাবের পানি:
সকালে খালি পেটে:
ডাবের পানি খাওয়ার সবচাইতে ভালো সকালে খালি পেটে খাওয়া। সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খেলে এটি আমাদের পচনতন্ত্রকে জাগিয়ে তোলে। সকালে ডাবের পানি আমাদের শরীরে কার্যক্রিয়াকে দ্রুত করে এবং শরীর সতেজ করে।
শরীরচর্চা করার পর:
আমরা অনেকেই সরি কে সিট সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করে থাকি। জিমে অথবা বাড়িতে থেকে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা যায়। শরীরচর্চা করার পর আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যাই। এইজন্য এবার শরীর চর্চা করার পূর্বে এবং পরে পান করলে শরীর ক্লান্তি দূর হয় এবং শক্তি পাওয়া যায়। ডাবের পানি আমাদের শরীরে প্রয়োজনে খনিজ পদার্থ পূরণ করে।
অতিরিক্ত পরিশ্রম করার পর:
আমরা যারা অতিরিক্ত পরিশ্রমী ব্যক্তি সারাদিন পরিশ্রম করি আমাদের দৈনিক ডাবর পানি পান করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রমী ব্যক্তিরা প্রচুর পরিমাণে ঘামে এবং শরীর থেকে পানি এবং লবণ বেরিয়ে যাই। ডাবের পানি আমাদের শরীরের ওই পানি এবং খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ করে।
গর্ভবতী মায়েদের ডাবের পানির উপকারিতা
একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায়ী পুষ্টির প্রয়োজনীয় অনেক। ডাবের পানিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। তাই গর্ব অবস্থায় ডাবের পানি পান করলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ করে। ডাবের পানি গর্ভবতী মা ও শিশুর সঠিক বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডাবের পানি গর্ভবতী মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। একজন চিকিৎসকের মধ্যে গর্ভবতী মায়েদের তিন মাস থেকে ডাবের পানি খাওয়া শুরু করা উচিত।
ডাবের পানিতে রয়েছে ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য পুষ্টি সরবরাহের একটি বড় উৎস। গর্ভাবস্থায় অনেকের অতিরিক্ত পরিমাণে বমি হয়। ডাবের পানিত বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা হল পানি শূন্যতা। গর্ভাবস্থায় অনেকেরই পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
তবে গর্ভবতী মা ও শিশু সুস্থ থাকার জন্য শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা প্রয়োজন। আর শরীরের এই পানি শূন্যতার কার্তিক পূরণ করা ডাবের পানি। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তাই পানি শূন্যতা রোধ করতে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাবের পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে আপনার গর্ভাবস্থায় যদি হয় গরমকালে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সতেজ এবং ডিহাইড্রেশন মুক্ত থাকার জন্য প্রতিদিন ডাবের পানি পান করতে হবে।
ডাবের পানি খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা
এতক্ষণে আমরা জেনেছি ডাবের পানি বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে। এখন জানবো খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা। খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। খালি পেটে ডাবের পানি আমাদের শরীরের প্রয়োজনে পুষ্টি সরবরাহ করে, হজম শক্তি উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, শরীরকে সতেজ রাখে এবং শক্তি জোগায়। আসুন জেনে নিয় খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে:
- খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। খালি পেটে ডাবের পানি আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায় এবং প্রান্তি দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
- খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে পেট পরিষ্কার রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। ডাবের পানিতে রয়েছে ফাইবার ও প্রাকৃতিক এনজাইম যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ডাবের পানিতে ক্যালরি ও ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। শরীরে ক্যালরি ও ফ্যাটের পরিমাণ ওজন কমাতে দ্রুত সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে ডাবের পানি খালি পেটে খেলে এটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আরো বেশি উপকার করে।
- খালি পেটে ডাবের পানি ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। খালি পেটে ডাবু পানি পান করলে ত্বক ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ত্বকে বিভিন্ন দাগ চোখ দূর করে এবং ত্বকের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে।
- যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কিডনিতে পাথর জমা রোধ করবে এবং পরিষ্কার রাখবে। খালি পেটে ডাবের পানি পান করা কিডনি ভালো রাখার জন্য বেশ উপকারী।
ডাবের পানি খেলে কি গ্যাস হয়?
প্রথমত ডাবের পানি খেলে গ্যাস হয় না এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন কোন ব্যক্তির যদি ঠান্ডা, সর্দি, হাঁচি-কাশি, এলার্জি রোগে আক্রান্ত থাকে সেক্ষেত্রে তার সে সময় ডাবের পানি পান করাটা শরীরের জন্য নিরাপদ হবে না। কারণ ডাবের পানি শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে শীতল করে। তাই ঠান্ডায় আক্রান্ত অবস্থায় ডাবের পানি পান করা উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে সহজে ফেসপ্যাক তৈরির উপায়
কিডনি ভালো রাখার জন্য ডাবের পানি পান করা ভালো কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি পান করা মোটেও ভালো না। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন আপনারা কিডনি ভালো রাখার জন্য ডাবের পানি পান করতে পারেন কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাবের পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হবে। ডাবের পানি ফাইবারে একটি বড় উৎস।
ফাইবার আমাদের পচনতন্ত্রকে ভালো রাখে এবং হজম শক্তিকে উন্নত করে। ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে এসিডিটির মতো সমস্যা থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে ফাইবার খাবার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত বড় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের ধারণা অনুযায়ী ডাবের পানিতে গ্যাসের সমস্যা হয় না।
রাতে ডাবের পানি খেলে কি ধরনের সমস্যা হয়?
রাতে ডাবের পানি পান করার ফলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যে সকল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তারা হলো কিডনি সমস্যা ব্যক্তিদের, কম রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, এলার্জি আছে। এ সকল ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডাবের পানি পান করার আগে অবশ্যই নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে করে কোনরকম শারীরিক সমস্যা থাকলে অবশ্য একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ডাবের পানি পান করা উচিত। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কাদের জন্য ডাবের পানি পান করা ক্ষতিকর :
কিডনিজনিত সমস্যা:
ডাবের পানিতে অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা কিধি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ ডাবের পানিতে অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ডাবের পানি পান করলে পটাশিয়ামের পরিমাণ শরীরে অধিক পরিমাণে হয়ে যাবে কিডনি ও হৃদপিণ্ডকে অকার্যকর করে দেবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য:
ডাবের পানিতে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। কার্বোহাইড্রেট অকেলের পরিমাণ বেশি থাকায় পানি পান করলে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাবের পানি ঝুঁকিপূর্ণ।
এলার্জি জনিত সমস্যা:
এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা। আমাদের প্রায় সব খাবারের এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেরই ডাবে এলার্জি হতে পারে। ডাবের এলার্জি হলে আপনার ত্বকের চুলকানি হবে লালচে ভাব ও চাকা চাকা দাগ দেখা দিবে। সেক্ষেত্রে এলার্জিজনিত সমস্যায় ডাবের পানি পান না করাই উচিত।
হার্টের সমস্যায়:
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে হার্টের রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতিকর। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়াম হৃদপিণ্ড অকার্যকর করে দেয়। তাই করে হাটের রোগীদের ডাবের পানি পান না করা উচিত।
ডাবের পানি মুখে ব্যবহারের উপকারিতা
ত্বকের যত্নের ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে কি কখনো শুনেছেন? যদি ত্বকের জন্য ডাবের উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নিন। ত্বকের যত্নের ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। ডাব শুধু স্বাস্থ্য নয় লোকের জন্য বেশ উপকারী। কারণ ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন উপাদান যা ত্বকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ডাবের পানি ত্বকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তাহলে চলুন ত্বকের জন্য ডাবের পানির কতটা উপকারী সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
ত্বক পরিষ্কার রাখে:
ডাবের পানিকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার বলা হয়। প্রকৃতির সৃষ্টি ডাব, ডাবের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন উপাদান যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করে।
ব্রণ ও দাগ দূর করে:
ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন দাগ ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। ত্বককে দাগ মুক্ত ও পরিষ্কার রাখে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়:
ডাবের পানিতে থাকে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর করে। ত্বকের রং উজ্জ্বল করে এবং সমতল সাহায্য করে।
ত্বককে সতেজ রাখে:
ডাবের পানিতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। তোকে ময়েশ্চারাইজার করে এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ডাবের পানি কোলাজেন উৎপাদনের একটি বড় উৎস।
ডাবের পানির পুষ্টি উপাদান সমূহ
ডাব যতোটা প্রয়োজন একজন সুস্থ মানুষের জন্য, আর অধিক প্রয়োজন একজন অস্ত মানুষের জন্য। কারণ ডাবের পুষ্টিগুণ এতই বেশি যে একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলে। ডাবের পানিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান সমূহ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ডাবের পানির পুষ্টিগুণ উপাদান সম্পর্কে:
পুষ্টি উপাদানের নাম | পুষ্টি উপাদান সমূহ |
---|---|
পানি | ৯৫.৫ শতাংশ |
নাইট্রোজেন | ০.০৫ শতাংশ |
ফসফরিক | ০.৫৬ শতাংশ |
পটাশিয়াম | ০.২৫ শতাংশ |
ক্যালসিয়াম | ০.৬৯ শতাংশ |
ম্যাগনেশিয়াম | ০.৫৯ শতাংশ |
কার্বোহাইড্রেট | ১৫ গ্রাম |
চিনি | ৮ গ্রাম |
জলীয় অংশ |
৯৪ শতাংশ |
ডাবের পানির অপকারীতা
লেখকের শেষ কথাঃ গরমে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে
ডাবের পানিকে প্রকৃতির স্যালাইন বলা হয়। এতক্ষণে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি ডাবের পানি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। ডাবের পানির পুষ্টিগুণ এত বেশি যে উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ডাবের পানি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজমে সহায়তা করে, গরম কালে শরীর ডিহহাইড্রেশন মুক্ত রাখে, পানি শূন্যতা রোধ করে, শরীর সতেজ করে এবং শক্তি যোগায়, শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে।
তবে ডাবের পানি কিছু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যাদের ডাইবেটিস রয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ ব্যক্তি, কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডাবের পানির অপকারিতা থেকে উপকারিতা বেশি। ডাবের পানির উপকারিতা পেতে হলে আপনাদেরকে এটি নিয়মিত পান করতে হবে। কোন কিছু উপকারিতা তখনই পাওয়া যায় যখন এটি আমরা নিয়ম মেনে নিয়মিত খাব।
প্রিয় বন্ধুগণ আশা করছি আমাদের লেখা ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আপনারা যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকি তাহলে অবশ্যই ডাবের পানির উপকারিতা গুলো আপনারা জেনেছেন এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপকার করবে না অপকার করবে সেটিও জেনেছেন। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে তথ্য নির্ভর হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। এরকম আরো তথ্য নির্ভর আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের সঙ্গে থাকুন ভালো থাকুন।
মেনি অল ইনফর্মেশন বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url